ডায়াল সিলেট ডেস্ক ॥ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজে বাঁধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রেহেনা চা-বাগানের শ্রমিক ও কাঁকড়াছড়া পুঞ্জিতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকদের মধ্য সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শান্ত রয়েছে।

এর আগে বুধবার ২২ মার্চ সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ সকাল পর্যন্ত দুই পক্ষের মাঝে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতায় বসেন। বৈঠকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান, পুলিশ প্রশাসন, বাগান ব্যবস্থাপক ও পুঞ্জির লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নে রেহেনা চা-বাগান ও কাঁকড়াছড়া পুঞ্জি পড়েছে। পুঞ্জিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া ও গারো সম্প্রদায়ের ২১টি পরিবার দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে। ওই পরিবারের সদস্যরা সেখানে পান চাষ ও তা বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। পুঞ্জির পাশঘেঁষেই রয়েছে রেহেনা চা-বাগান। পুঞ্জির বাসিন্দারা ওই বাগানের ইজারাভুক্ত টিলাভূমির ১৪ নং সেকশন ও বাগানের অভ্যন্তরের ১৩ নং সেকশনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাচল করেন।

আসন্ন ইস্টার সানডে উপলক্ষে পুঞ্জিতে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ লক্ষে গতকাল বুধবার (২২ মার্চ) সকালে পুঞ্জির লোকজন তাদের চলাচলের সুবিধার্থে কাঁচা রাস্তা সম্প্রসারণ করার জন্য কাজ শুরু করেন। এসময় চা-বাগানের শ্রমিকরা গিয়ে তাঁদের বাঁধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা উত্তপ্ত ছিল। খবর পেয়ে বুধবার রাতেই পুলিশ প্রশাসন প্রথম দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ দিকে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালের দিকে চা-বাগানের লোকজন ওই রাস্তায় চায়ের চারা গাছ রোপন করে ফেলেন। এ সময় রাস্তা দিয়ে প্রবেশের চেষ্টাকালে তাঁরা পুঞ্জির এক বাসিন্দাকে বাঁধা দেন।

এ সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জড়ো হতে থাকে। পুঞ্জির হেডম্যান জনপল জানান, বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় ৯টার দিকে বাগানের শ্রমিকরা ওই রাস্তার একপ্রান্তে (আদাআদি মোকাম সংলগ্ন) এলাকায় চা গাছের চারা রোপণ করতে থাকেন। চারা রোপণের কারণ জানতে চাইলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তাছাড়া পুঞ্জির প্রবেশমুখে একটি ছড়ার উপর বাঁশের সাঁকোটিও উপড়ে ফেলছেন বাগান শ্রমিকরা।

তিনি আরও বলেন, বাগানের ফ্যাক্টরির পেছনের রাস্তার দূরত্ব অনেক বেশী। তাই বাগানের ১৪ নম্বর সেকশনের রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। তবে আমরা রাস্তা প্রসারিত করিনি শুধুমাত্র চলাচলের জন্য একটু সংস্কার করেছি। রেহানা চা বাগান ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ বলেন, বাগানের ১৪নং সেকশনের রাস্তায় আমাদের না জানিয়ে পুঞ্জির লোকজন ৭-৮ ফুট রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ করেছে।

তাছাড়া চা গাছের চারাও নষ্ট করেছে। তাই আমরা সেখানে চা গাছের চারা লাগিয়েছি। পুঞ্জির লোকজনকে আগেই বলা হয়েছে, তারা যেন বাগানের ফ্যাক্টরির পেছনের রাস্তাটি ব্যবহার করে। কিন্তু তারা সেটি না করে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। এই রাস্তায় অবাধে চলাচল করলে বাগানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং গাছ চুরির প্রবণতা বেড়ে যাবে।

কুলাউড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ নোমান বলেন, বিরোধপূর্ণ ওই রাস্তায় আপাতত কোন পক্ষকে কাজ না করতে বলেছি। শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন সেদিকে খেয়াল রেখে একটি সুন্দর সমাধান প্রয়োজন। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দুই পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে দ্রুত বৈঠকে বসা হবে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদি হাসান বলেন, রাস্তার কাজ নিয়ে পুঞ্জির লোকজন ও বাগান শ্রমিকরা একটি সংঘাতের দিকে যাচ্ছিলো। পরে ইউএনও স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে ছুঁটে যাই। তখন দুই পক্ষকে নিয়ে সমঝোতায় বসি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে দুই পক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুই পক্ষ তাতে সম্মতও হয়েছে।

পুঞ্জির লোকজন জানিয়েছেন, ইস্টার সানডে উপলক্ষে তারা রাস্তায় সংস্কার কাজ করেছিল। যদিও ওই রাস্তাটি বাগানের। তিনি বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে রাস্তার সংস্কার কাজ করলে হয়তো দ্বন্ধের সৃষ্টি হতো না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *