ডায়াল সিলেট ডেস্ক ॥ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনব্যাপী সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বাসন্তী পূজা’ শেষ হয়েছে আজ শুক্রবার। শুভ বিজয়া দশমী।
চণ্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে গত সোমবার (২৭ মার্চ) থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বাসন্তী পূজা শুরু হয়।
পরবর্তী ৪ দিন সারাদেশব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনায় ভক্তরা বাসন্তী পূজায় শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের বাসন্তী পুজোই বাঙালির আদি দুর্গাপুজো৷ যদিও এখন আশ্বিন শুক্লপক্ষের দুর্গাপুজোই বেশি আড়ম্বরে পালিত হয়৷
এখন যতই আমরা আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজো করি না কেন, বাঙালির আদি দুর্গাপুজো হত এই চৈত্র মাসেই৷
আজ শুক্রবার (৩১ মার্চ) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বাসন্তী পূজা।
এ দিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিটি মণ্ডপ ও মন্দিরে ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা, ধূপ আরতি ও পূজা-অর্চনায় কেবলই ছিল মায়ের বিদায়ের সুর। গতকাল দিনব্যাপী পূজামণ্ডপগুলোয় সারাবিশ্বের কল্যাণ কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হয় নবমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
উল্লেখ”পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন৷ যা পরে বাসন্তী পুজো নামে প্রসিদ্ধ হয়৷
দেবী দুর্গার প্রথম পুজোরী হিসাবে চণ্ডীতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে৷সুরথ সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ খ্যাত ছিলেন৷ কোনও যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হারেননি৷ কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য একদিন তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন৷ এই সুযোগে তাঁর সভাসদরাও লুটপাট চালায়৷ কাছের মানুষের এমন আচরণে স্তম্ভিত হয়ে যান সুরথ৷ বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে পৌঁছোন৷
ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন৷ কিন্তু রাজা শান্তি পান না৷ এর মধ্যে একদিন তাঁর সমাধির সঙ্গে দেখা হয়৷ তিনি জানতে পারেন, সমাধিকেও তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে৷ তবুও তিনি বৌ-ছেলের ভালোমন্দ এখনও ভেবে চলেছেন৷
তাঁরা দুজনেই তখন ভাবলেন, যাদের কারণে তাদের সব কিছু হারিয়েছে, তাদের ভালো আজও তারা চেয়ে যাচ্ছেন৷ ঋষিকে একথা বলায়, তিনি বলেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা৷ এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনি বর্ণনা করেন৷ ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন৷ পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন৷ শুরু হয় বাসন্তী পুজো৷
বাসন্তী পূজা নিয়ে মেতে ওঠে সবাই৷ একটি বছরে চারটি নবরাত্রি আসে, তার মধ্যে দুটি গুপ্ত নবরাত্রি, তবে শরত নবরাত্রি এবং বসন্ত নবরাত্রির উদযাপন প্রায় গোটা দেশজুড়েই হয়ে থাকে৷ সূর্য ও চন্দ্রের নির্দিষ্ট অবস্থান মেনে চলার মাধ্যমে নবরাত্রি পালিত হয়৷
বসন্ত নবরাত্রিটি পালিত হয় বাসন্তী পুজো হিসেবে৷ শারদীয় দুর্গাপূজার মত এই বাসন্তী পুজোও দেবী দুর্গারই আরাধনার জন্য করা হয়৷ আদি কালে দূর্গার আরাধনায় বাসন্তী পুজোই করা হত৷ তবে আজও বসন্ত নবরাত্রিতে নয় দিন ব্যাপী দেবী দুর্গার পুজো করা হয়৷ কিন্তু এই বাসন্তী পূজা এখন কিছু জমিদার বাড়ি তথা বনেদি বাড়িতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে৷
অন্যদিকে কৃত্তিবাসীয় রামায়ণে বর্ণনা করা হয়েছে যে শ্রী রামচন্দ্র বনবাসে যাওয়ার পর যখন সীতা হরণ হয়, তখন রাবণকে হারিয়ে সীতাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য শরৎকালে মহামায়ার আরাধনা করেছিলেন৷ সেই সময় সূর্যের দক্ষিণায়ন চলে, তাই দেব-দেবীরা নিদ্রায় থাকেন বলে বিশ্বাস করা হয়৷ সেই আশ্বিন মাসের পুজোই এখন গোটা বিশ্বে প্রসিদ্ধ দুর্গা পুজো৷
এই পুজাটি অকালে করা হয়েছিল বলেই একে অকাল বোধন বলা হয়ে থাকে৷ তবে বাঙালিরা আদি দুর্গাপুজো অর্থাৎ বাসন্তী পূজাকে কোনও দিনই পুরোপুরিভাবে ভুলে যায়নি৷ তাই আজও অনেক জায়গাতেই মহামায়ার পুজোর আদিরূপ বাসন্তী পুজোর আয়োজন বেশ আড়ম্বর করে করা হয়৷
চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বোধনের মধ্য দিয়ে বাসন্তী পূজা শুরু হয়। বসন্তকালে হয় বলে এর নাম বাসন্তী পূজা। শারদীয় দুর্গোৎসবের মতই সব নিয়ম মেনে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোকজন বাসন্তী পূজা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পালন করে।
আজ ৩১ মার্চ শুক্রবার দেবীর দশমী বিহিত পূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাসন্তী পূজা সমাপ্ত হয়।
এবার দেবীর ঘোটকে আগমন ও দেবীর দোলায় গমন করেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *