ডায়ালসিলেট ডেস্ক: মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধিন গোমড়া এলাকায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামে নামকরণ করে ১৯৯৫ সালে গড়ে উঠে “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়” জানাযায়, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে অনেকটা সততার সাথে পরিচালিত হচ্ছিলো
কিন্তু যখনই বিদ্যালয়টি এমপিও হয় এবং উচ্চবিদ্যালয়ে উন্নিত তখন থেকে শুরু হয় বিভিন্ন সমস্যা এরমধ্যে দিনে দিনে বারতে থাকে দুর্নীতির মাত্রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দারা বলেন, মূলত এরপর থেকেই শুরু হয় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনিয়ম আর দুর্নীতি, এই অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এমন হারে বেড়েছে যার প্রতিকার চেয়ে গত ১৩/১০/২০২১ তারিখে বিদ্যালয়ের একজন দাতা সদস্য কয়েকজনের নাম উল্লেখ্য করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক সহ বিভিন্ন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে অভিযোগকারি দাতা সদস্য বলেন, “আমি অভিযোগ দিয়েছিলাম সত্য, তবে পরবর্তীতে তাদের সাথে কম্প্রোমাইজ হয়ে গেছে তাই এবিষয়ে আর এগোইনি” দুর্নীতির বিরুদ্ধে কম্প্রোমাইজ করাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি প্রবীন এই দাতা সদস্য।

সর্বশেষ যে লঙ্কাকাণ্ডটি ঘটেছে সেটা হলো গত রমজান মাসে প্রধানমন্ত্রি নবম ও দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা বৃদ্ধি ও ইন্টারনেট দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত থেকে নিজেকে এখন থেকে যুগোপযোগী করে তৈরি করার জন্য ট্যাব উপহার দেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও দেওয়া হয় নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে মোট ৬ টি ট্যাব। উক্ত দুই শ্রেণীতে যাদের রোল নং ১ থেকে ৩ পর্যন্ত রয়েছে মেধাবী হিসেবে তাদেরকে দেয়ার কথা অথচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সায়েম ও সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেনের সরাসরি স্বজনপ্রীতি ও অসহযোগিতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত হলো কোমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী নবম শ্রেণির ছাত্রী তাজিলা আক্তার মুক্তা (রোল নং-১) বলেন “ট্যাব গুলো ১ থেকে ৩ রোল যাদের রয়েছে তাদেরকে না দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেক পিছনের রোল যাদের রয়েছে তাদেরকে দিয়ে দেন, পরবর্তীতে আমাদের অবিভাবকদের চাপে দুই একটি ট্যাব আবার স্কুলে ফিরিয়ে আনেন এবং বলেন এগুলো স্কুলেই থাকবে, তোমাদের কাছে দিলে তোমাদের ব্রেইন নষ্ট হয়ে যাবে। একই শ্রেণির মহবুবা আক্তার তিশা (রোল নং-২) বলেন আমারা যাদের ১,২,৩ রোল রয়েছে সরকার থেকে যে উপহার ট্যাব দেওয়া হয়েছে সেগুলো আমরা পাইনি, আমাদেরকে না দিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক পিছনে যাদের রোল রয়েছে তাদেরকে, এমনকি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভীরকে নবম শ্রেণির ছাত্র দেখিয়ে তাকে ট্যাব দেওয়া হয়েছে, এরপর আমাদের অবিভাবকরা প্রতিবাদ করলে দুই একটি ট্যাব স্কুলে ফিরিয়ে আনেন এবং আলমগীর স্যার বলেন এগুলো স্কুলেই থাকবে এখন ট্যাব ব্যাবহার করলে মেধা নষ্ট হয়ে যাবে, অথচ এই আলমগীর স্যার সবাইকে সাথে করে নিয়ে উপজেলা থেকে ট্যাব দিয়েছেন, তিনিই সকল ছাত্র-ছাত্রির নামের লিস্ট দিয়েছেন”, নবম শ্রেণির ছাত্রী জুমা আক্তার (রোল নং-২৮) এর মা বলেন আলমগীর স্যার রমজান মাসে আমার মেয়েকে নিয়ে উপজেলায় যান এবং একটি ট্যাব দেন কিন্তু কয়েকদিন আগে সেটা আবার ফিরিয়ে নেন, তখন কেন এমন করছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন কমিটিতে ঝামেলা হইছে এজন্য নিচ্ছি এখন থেকে এগুলো স্কুলে থাকবে, এরপর অদ্য ১০/০৫/২০২৩ রোজ বুধবার আমাকে বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে বলেন আগামীকাল জুমাকে ট্যাব ফিরিয়ে দিবেন।

এবিষয়ে মুঠোফোনে কথা কথা হয় সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেনের এর সাথে তাকে ছাত্রছাত্রীদের তালিকার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন হেড মাষ্টার (প্রধান শিক্ষক) এই তালিকা করেছেন, কিন্তু ছাত্ররা বললেন তালিকা এবং তাদেরকে উপজেলাতে আপনি নিয়ে গেছেন এমনন প্রশ্নে তিনি ইতস্তত বোধ করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন তালিকা আমি করছি, এবিষয়ে হেড স্যার (প্রধান শিক্ষক), ম্যানেজিং কমিটি না করছেন কোনো কথা না বলার জন্য এটা উনারা সমাধান করবেন, ম্যানেজিং কমিটি সমাধান করবেন ভালো কথা কিন্তু আপনারা নবম দশম শ্রেণির ১,২,৩ রোল নং রেখে ২৮ রোল নং এবং এর বাইরে রোল নাম্বার যাদের তাদের নাম কেন তালিকায় দিলেন এবং অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভিরকে কেন তালিকায় দিলেন এমন প্রশ্নে আলমগীর হোসেন আবারও একই কথা বলেন হেড মাষ্টার ( প্রধান শিক্ষক) ও কমিটি এর সমাধান দিবে এসব বিষয়ে কথা বলে কোনো লাভ নাই বলেই দাম্ভিকতা দেখিয়ে রাখি বলে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবু সায়েম এর সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অগোছালো ভাবে একেক সময় একেক কথা বলেন, কয় তারিখে ছাত্রদেরকে ট্যাব দেওয়া হয়েছে এ কথার প্রতিত্তোরে বলেন তিনি তখন ট্রেনিংয়ে ছিলেন তার মনে নেই কয় তারিখে দেওয়া হয়েছে, আবার বলেন নিজে তালিকা করেছেন উনার কথাবার্তা অস্বাভাবিক ছিলো, তিনি (সন্ধ্যা ৭:৪১ ঘটিকা) কথা বলেন ঘুমঘুম ভাব নিয়ে, তিনি বলেন একটা সমস্যা হয়েছিল আমি অবিভাবকদেরকে বলছি ম্যানেজিং কমিটিকে নিয়ে সমাধান করে দেব। পরে প্রশ্ন করা হয় এখানে নবম দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের রেখে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভির এর নাম কিভাবে তালিকায় ঢুকলো উত্তরে তিনি বলেন অনেক সময় অনেক কাজ করতে গেলে ভুল হয়ে থাকে এবিষয়ে আমি ফোনে আপনার সাথে আলাপ করতে চাইনা আপনি অফিসে আসেন।

১,২,৩ রোল নাম্বার রেখে কেন এর বাইরের ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকা পাঠানো হলো এমন প্রশ্নে তিনি উত্তেজিত স্বরে বলেন,আমিতো বলছি ম্যানেজিং কমিটিকে নিয়ে বিষয়টি সমাধান করবো আমি আর আপনার সাথে ফোনে কথা বলতে পারবোনা বলে ফোন রাখতে চাইলে প্রশ্ন করা হলো কেন এমন তালিকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্থান পেলোনা তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন যারা বছরের পর বছর স্কুলে আসেনা তাহলে কিভাবে নাম দেবো, তাছাড়া উপস্থিত সময়ে তালিকা করতে অনেক তথ্যের প্রয়োজন ছিলো তাই অন্যদের নাম দিয়েছি। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে তালিকা কেন? আপনাদের রেজিস্ট্রার খাতায় তাদের নাম রয়েছে একথা বলতেই তিনি আর ফোনে কথা বলতে পারবেননা বলে ফোন কেটে দেন।

এবিষয়ে কথা হয় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ মিয়া এর সাথে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই উপহার গুলো পরিসংখ্যান ব্যুরো কার্যালয় থেকে আমাদের এখানে আসে মেধাবী শিক্ষার্থীদের তালিকা করে দেওয়ার জন্য, আমি তখন প্রত্যেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে নবম ও দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী যাদের রোল ১ থেকে ৩ এর মধ্যে রয়েছে তাদের তালিকা দেওয়ার জন্য বলি, তখন প্রধান শিক্ষক বৃন্দ আমাকে যে তালিকা প্রেরণ করেন আমি সেই অনুযায়ী কাজ করেছি, অভিযোগের বিষয়ে আলাপ করলে তিনি বলেন অবিভাবকরা যদি আবেদন করেন তাহলে আমি সেটা দেখবো।

একটি উচ্চবিদ্যালয়ে এতবড় একটি দুর্নীতির কথা যখন এক এক করে এলাকায় প্রকাশ হতে থাকে তখন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক অবিভাবক বলেন এখানেই শেষ নয় আপনারা একটু ঘাটাঘাটি করলে আরো অনেক কিছু বেড়িয়ে আসবে, সব নাটের মূলে রয়েছেন সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না এখানে তার অনেক শক্ত একটি সিন্ডিকেট রয়েছে।
বিষয়গুলো নিয়ে সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকের কোনো কথা না শুনে সাথে সাথে ফোন কেটে দেন।

একাধিক বার চেষ্টা করেও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিপ্রা রাণী দাস কে মুঠোফোন পাওয়া যায়নি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *