ডায়াল সিলেট ডেস্ক :  প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালের দেওয়া ‘সাংকেতিক চিহ্ন’ ছাড়া নেওয়া হয় না কোনো আবেদন। ওই সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে চলছে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য। অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, দালাল এবং বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির যোগসাজশে এ বাণিজ্য চলছে।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঘুষ ছাড়া কলম নড়ে না অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর। আবেদন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত ধাপে ধাপে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা।
বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাসপোর্ট অফিসে আসা একাধিক আবেদনকারী জানান, নির্ধারিত ফি ৫ হাজার ৭৫০ (সাধারণ) এবং ৮ হাজার ৫০ (জরুরি) টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে পাসপোর্ট অফিসে আবেদন দিতে গেলে গ্রহণকারী স্টাফ আবেদনের প্রথম পাতা এবং ভেতরের ৭৭ নম্বর কলাম দেখেন। ওনার মনমতো হলে অর্থাৎ সাংকেতিক চিহ্ন থাকলে জমা নেন। অন্যথায় কাউকে পরামর্শ দেন দালাল অথবা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে জমা দিতে। আবার কাউকে পাঠান অফিসের দ্বিতীয় স্যারের কাছে। বাধ্য হয়ে মানুষ দালাল অথবা ট্রাভেলসের মাধ্যমে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য সাড়ে ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার আর জরুরি পাসপোর্টের জন্য ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়ার জন্য ফরম হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। হাতেগোনা দুই-একটি বাদে প্রায় সব আবেদন ফরমের কোথাও না কোথাও বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন বা কোড রয়েছে। যেসব আবেদনকারী দালাল অথবা ট্রাভেল এজেন্সি ছাড়া নিজে আবেদন জমা দিতে চান বিভিন্ন অজুহাতে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
আবেদন ফরমে দেওয়া বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ও কোড দিয়ে কী বুঝায় জানতে চাইলে এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বলেন, এসব চিহ্ন ও কোড মানে পাসপোর্ট অফিসে নিশ্চিত ১ হাজার ৫০০ টাকা জমা হয়েছে।
জেলার বড়লেখা উপজেলা থেকে পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন যুবক জাকির আহমদ। তিনি বলেন, ‘আবেদন জমা দেওয়ার পর ছয় মাস ধরে পাসপোর্ট অফিসে আসা-যাওয়া করছি, কিন্তু পাসপোর্ট পাচ্ছি না। আমার অপরাধ আমি কোনো মাধ্যম ছাড়াই আবেদন করেছিলাম।’
কমলগঞ্জের ফয়সল আহমেদ বলেন, ‘আমি নিজেই আবেদন জমা দিয়েছিলাম, কিন্তু জমা নেননি কর্তৃপক্ষ। বেলাল নামে একজন অফিস স্টাফ আমাকে পরামর্শ দেন কোনো মাধ্যম ধরে আসার জন্য। বাধ্য হয়ে উপপরিচালকের কাছে যাই। সেখানেও একই অজুহাত দেখিয়ে আমাকে বিদায় করে দেন।’
এসব বিষয়ে মৌলভীবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মানিক চন্দ্র দেবনাথকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *