ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: দলের চেয়ারপারসন অসুস্থ, কার্যত গৃহবন্দি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই মুহূর্তে দেশের আসার সুযোগ নেই। সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা দেশের বাইরে ব্যক্তিগত ও চিকিৎসাজনিত কারণে। বার্ধক্য ভর করেছে সিনিয়র নেতাদের বড় একটি অংশের। অধিকাংশ নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত। সরকার পতনের আন্দোলনও এখনো সফলতার মুখ দেখার পর্যায়ে যায়নি। কারণ ভিন্ন হলেও সব মিলিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মনে এবারও নেই ঈদের আনন্দ।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ঈদ। এই উৎসব কেন্দ্র করে নেতারা সাধারণত এলাকাবাসীর সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পছন্দ করেন। নির্বাচনী প্রভাব সেই তাগিদ আরও ত্বরান্বিত করে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা অধিকাংশই এলাকামুখী। তবে বিএনপি নেতারা তাদের আন্দোলনের মতোই অনেকটা ছন্নছাড়া। কেউ কেউ নিজ সংসদীয় এলাকায় গেলেও বিশেষ কর্মসূচি আছে বলে জানা যায়নি।

 

দলীয় সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘরবন্দি ঈদ করা ছাড়া উপায় নেই। এই মুহূর্তে সুযোগ বা সামর্থ্য নেই প্রকাশ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়ের। স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ঢাকায়, আব্দুল মঈন খান নরসিংদী থেকে ঢাকায় ফিরবেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমেরিকা, সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতে, ইকবাল হোসেন মাহমুদ টুকু দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন।

 

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদ উদযাপন ও দলীয় কর্মসূচিতে গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও গেছেন। এবার তিনি সেখানে ঈদ উদযাপন করবেন এবং বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করবেন। ঈদের দিন ঢাকায় থাকছেন না। এছাড়া বিএনপি সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ অন্য নেতারা নিজ নিজ এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন।

 

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বার্ধক্যজনিত গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছেন। মামলার কারণে রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয়। এই বয়সে এসে সন্তান, নাতি-নাতনিদের সান্নিধ্য পাওয়ার কথা থাকলেও বঞ্চিত। বরং নিঃসঙ্গ সময় কাটছে তার। দলের আরেক শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ বছর প্রবাসে। দেশে থাকা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ নেই তার।

 

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এখনো ভারতে। বয়স ৬৫ পেরিয়েছে। মির্জা আব্বাসের বয়স ৭০ ঊর্ধ্ব। বার্ধক্যজনিত নানান সংকটে ভুগছেন তারা। পাশাপাশি রয়েছে মামলার চাপ। দলে ব্যবসায়ী নেতা যারা রয়েছেন তারাও বেশ সংকটে রয়েছেন। করোনার পর থেকে অনেকটা ব্যাংকঋণ নির্ভর তারা। ব্যবসায়ও সেভাবে সুবিধা করতে পারছেন না।

 

রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে বাড়ি ছাড়া থাকতে হচ্ছে তাদের। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪০/ ৪৫ বছরের বয়সী নেতারা যখন দেখছেন তাদের সহপাঠী প্রশাসনের বড় কর্তা বা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ভালো আছে, সেখানে তিনি বিএনপির রাজনীতি করে অনেক পিছিয়ে। এই বয়সে যেখানে পরিবার-পরিজনদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা সেখানে নিজে চলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই ঈদ তাদের জন্য নিরানন্দই।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের একটি ইউনিটের সভাপতি বলেন, ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের অন্তত ২০ শতাংশ নেতাকর্মী এবার ঈদে বাড়িতে যাবে না। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক অনটন, মামলা আতংক কিংবা পরিবার বিচ্ছিন্নতা। সাংগঠনিকভাবে সিনিয়র নেতারা সে অর্থে খোঁজ-খবর নেন না বললেই চলে। যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা তাদের সমর্থন লাভের জন্য ঈদ ঘিরে এক ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে। বুকে কষ্টের পাহাড় নিয়ে এভাবেই কাটবে আমাদের এবারের ঈদ।

 

ঢাকা মহানগর উত্তর ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক মো. ফেরদৌস সায়মন বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা-১২ আসনের নেতাকর্মী-সমর্থকদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন সাইফুল আলম নিরব। কারাগারে থাকলেও তার পক্ষ থেকে দুস্থদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন করা হয়েছে।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, ঈদ ঘিরে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন পোস্টারে গোটা এলাকা ছেয়ে গেছে। এলাকাবাসীকে নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করবো।

 

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, গত এক যুগের বেশি সময় আমাদের ওপর আওয়ামী লীগ সরকারের যে জুলুম-নির্যাতন চলমান তাতে আমাদের ঈদ অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। আমাদের নেত্রীকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। বহু নেতাকর্মীকে এই সময়ের মধ্যে গুম করা হয়েছে, খুন হয়েছে। বহু পরিবার নিঃস্ব। তাই স্বাভাবিকভাবেই ঈদ খুব খুশির হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয় না। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত।

 

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *