ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর যুক্তরাজ্যের বাজারে তৈরি পোশাকসহ ট্যারিফ লাইনের ৯২ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।

 

এছাড়া বাংলাদেশ থেকে পান রপ্তানির ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়েও যুক্তরাজ্য আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভায় এসব আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল।

 

মঙ্গলবার ঢাকার ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রকল্প কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান।

 

সভা শেষে তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতার সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তারা যে ডেভেলপিং কান্ট্রিস ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) চালু করেছে, তা খুবই উদার ও ফ্লেক্সিবল। যুক্তরাজ্যের এই পলিসির আওতায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশ ৯২ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে।’

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ট্রানজিশন পিরিয়ড হিসেবে যুক্তরাজ্য ৩ বছর জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রুপ ৬ বছর ট্রানজিশন পিরিয়ড হিসেবে জিএসপি সুবিধা চেয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আবেদন করেছে। এ তথ্য তুলে ধরে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় যুক্তরাজ্যের কাছেও ৬ বছর ট্রানজিশন পিরিয়ড হিসেবে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছে ঢাকা।

 

সভায় উপস্থিত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল বলেছে, এ বিষয়ে তারা তাদের দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলাপ করবে।

 

ব্রেক্সিটের আগে, প্রায় এক দশক আগে, বাংলাদেশ থেকে পান আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০২১ সালে ইইউ বাংলাদেশের পান রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও যুক্তরাজ্যে সেই নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবৎ রয়েছে।

 

বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল পান রপ্তানির ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছে। এ বিষয়ে মো. আব্দুর রহিম খান জানান, যুক্তরাজ্য জানিয়েছে যে ইইউ পান রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে তারাও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। বিষয়টি নিয়ে তারা যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সির (এফএসএ) সঙ্গে আলোচনা করবে।

 

সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, হিমায়িত খাদ্য, আম ও সবজি রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

 

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য আন্তঃসীমান্ত উচ্চশিক্ষা-সংক্রান্ত নিয়ম প্রণয়ন ও মেধাস্বত্ব অধিকার প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছে।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বেড়ে ৫.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের অর্থবছরে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার ছিল। আর এক দশক দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল এখনকার অর্ধেক—২.৭ বিলিয়ন ডলার।

 

যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হওয়া প্রধান পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, আইটি, প্রকৌশল, চামড়া ও পাটজাত পণ্য এবং সাইকেল। রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই নিট পোশাক ও ওভেন পোশাকের দখলে।

 

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৮০ মিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ৩০ জুন অর্থবছরের শেষ নাগাদ এ আমদানির পরিমাণ প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

 

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *