মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ॥ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে নিম্নবিত্ত কর্মজীবী মায়েদের সন্তান রাখার জন্য সারা বাংলাদেশে ৪৪টি জেলা শহরে ডে কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি রয়েছে। সেখানে সরেজমিনে সাতজন শিশুর উপস্থিতি পাওয়া গেলেও তালিকায় ছিল ২৩ জন। এদিকে ঠিকাদার না পাওয়ায় সেন্টারটিতে খাবার সরবরাহ করেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাহিদা আকতার নিজেই।
গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে ডে কেয়ার সেন্টারের জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাহিদা আকতারের নানা অনিয়মের চিত্রফুটে ওঠে। তালিকার যেখানে শিশুর ছবি ও পিতা-মাতার নাম-ঠিকানা থাকে, সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি।
ব্যক্তি মালিকানাধীন তিন তলা একটি ভবনের নিচতলায় শ্রীমঙ্গল ডে কেয়ার সেন্টার দীর্ঘ ২১ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে। ভবনটিতে ছয়টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষে প্রধান কর্মকর্তার অফিস। একটি রান্নাঘর, দুটি কক্ষে বিছানাসহ আসবাবপত্র, বাকি দুটি কক্ষ খেলাধুলার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, ৮০ জন শিশু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। একজন শিশুর ভর্তিতে ১০০ টাকা ও মাসিক হারে  আরো ১০০ টাকা দিতে হয়।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে কোনো শিশুকে পাওয়া যায়নি। যদিও বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শিশুদের এখানে থাকার কথা।
আগে বন্ধ করার ফলে অভিভাবকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পর দিন সোমবার দুপুর ২টার দিকে ডে কেয়ার সেন্টার পরিদর্শনে গেলে সাতজন শিশু পাওয়া যায়। তবে তাদের রেজিস্টার্ড খাতায় ২৩ জনের একটি তালিকা রয়েছে। জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই ২৩ জন শিশুর তালিকা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু এ সেন্টারে প্রতিদিন সাত থেকে ৯ জন শিশু উপস্থিত থাকে। কোনো কোনোদিন ৫০ জন শিশুর উপস্থিতি দেখানো হয়েছে কাগজে-কলমে।
সকালে শিশুদের সকালের নাশতা হিসেবে সুজি এবং দুধ বরাদ্দ থাকলেও সেখানে শুধু সুজি পরিবেশন করা হয়। দুপুরে ডিম-ডাল, সবজি ও আলু বরাদ্দ থাকলেও সেখানে শুধু ডিম ও সবজি দেওয়া হয়। বিকেলে ফল বরাদ্দ থাকলেও সেটা দেওয়া হয় না।
দেখা গেছে, ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুদের লেখাপড়া করানোর জন্য কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে চার থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুরা প্রাথমিক অক্ষও জ্ঞানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপপরিচালক ও অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত সাহিদা আকতার বলেন, ‘নিজেইসাপ্লাইদিইখাবার। লোকবলসংকট। একাই পুরো জেলা দেখতে হয়। ২০১৫ সালে এই জেলায় যোগদান করে ছিলাম। এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডে কেয়ার অফিসার না থাকায় ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সাল থেকে নিজেই সব কিছু দেখতে হচ্ছে। ২৬ জুলাই একটি দৈনিক পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেনি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেই বাজার থেকে খাদ্য দ্রব্য কিনে সাপ্লাই দিয়ে থাকি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বাজার করিনা। বাবুল নামের ছেলেটি বাজার থেকে কিনে দ্রব্য সামগ্রী প্রতিদিন দিয়ে থাকে ডে কেয়ার সেন্টারে।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘ডে কেয়ার সেন্টার চলমান আছে, এতটুকু জানি। যেসব অনিয়মের অভিযোগ শুনলাম, সে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আজই খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *