ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা সিলেট। এই জনপদের সিংহভাগ মানুষ রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল। বিলাসিতায়ও অনেকটা এগিয়ে দেশের উত্তরপূর্ব অঞ্চলের এই বাসিন্দারা। বিশ্বে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ যখন ক্ষুধার্ত থাকে ঠিক তখনই বিলাসিতার কারণে সিলেটের মানুষরা খাদ্য অপচয়ে এগিয়ে!

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র খাবার প্রস্তুত, পরিবেশন ও ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতা এবং অদক্ষতার কারণে বেশি খাদ্য অপচয় হয় সিলেটে। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

এই হিসাব ধরে বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিলেটে ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য অপচয় হয়। এই অপচয় রোধ করা গেলে বহু মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা যাবে বছরে। বিশেষ করে বাসাবাড়ি, রেস্তোরাঁ, অনুষ্ঠানাদিতে এসব খাবার অপচয় করা হয় বলে ওই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, যা সরাসরি বর্জ্য হিসেবে ভাগাড়ে ফেলতে হয়।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৮২ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের প্রধান মো. সোহেলুর রহমান খান বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এখনো নিজস্ব কোনো কার্যক্রম নেই খাদ্য অপচয় ও নস্ট রোধে। তবে এই মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগ থেকে কিছু উদ্যোগ চলছে।’

একই মন্ত্রণালয়ের গবেষণা বিভাগের (এফপিএমইউ) গবেষণা পরিচালক মোস্তফা ফারুক বান্না বলেন, ‘আমরা তেমন কিছু করছি না। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো একটি জরিপ কার্যক্রম শুরু করেছে।’

জাতিসংঘের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স অনুসারে, বাংলাদেশে বছরে ১ কোটি ৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য অপচয় হয়। যেখানে মাথাপিছু অপচয় হয় বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য। অন্যদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক গবেষণার ফলাফল অনুসারে দেশের উচ্চ আয়ের পরিবারে প্রতি মাসে মাথাপিছু ২৬ কেজি খাবার অপচয় হয় প্রক্রিয়া করার সময়। এর ৫.৫ শতাংশ অসচেতনতা ও বিলাসিতার কারণে গৃহস্থালি পর্যায়ে অপচয় হয়। খাদ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি পর্যায়ে ৩ শতাংশ, পরিবেশন ও প্লেট পর্যায়ে ২.৫ শতাংশ অপচয় হয়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে নষ্ট ও অপচয় হওয়া খাদ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশই ফল ও সবজিজাতীয় খাদ্য। আর বাংলাদেশ ওই সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফল নষ্টকারী দেশের পর্যায়ে রয়েছে। ফল নিরাপদ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করতে না পারা, সংগ্রহের সময় জমিতে পড়ে থাকা, সংগ্রহের পর সংরক্ষণের জন্য নেওয়া কিংবা বাজার পর্যায়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াগত কারণে পচে নষ্ট হয়। এ ছাড়া এখনো দেশে আমসহ অন্যান্য ফল প্রক্রিয়াজাত করার বিষয়টি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। আগে ঝুড়িতে ফল বহনে বেশি নষ্ট হতো। কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিক ক্যারেটের প্রচলন হওয়ায় কিছুটা কম নষ্ট হচ্ছে। আবার তাপমাত্রাও সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না। সংরক্ষণস্থলও উপযুক্ত থাকে না। এতে ফলের পুষ্টিগুণও নষ্ট হয়ে যায়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *