ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের রক্তের দাগ না মুছতেই রাজধানীতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা বিক্ষোভ মিছিল করছে তারা। মিছিলে অংশ নেওয়া অনেকের বিরুদ্ধেই ছাত্র-জনতা হত্যার মামলা রয়েছে।
এসব মিছিল ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নির্দেশ দিলেও খুব একটা কাজে আসছে না। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
এমন বাস্তবতায় রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সব ধরনের অপতৎপরতা ঠেকাতে মাঠ পুলিশকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
সক্রিয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তাদের গ্রেফতারে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে ডিএমপির ক্রাইম ও গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সিআইএমএস (সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) ফরম পূরণের মাধ্যমে রাজধানীর কোন এলাকায় কে থাকেন, কারা রাজধানী ছেড়েছে এবং নতুন করে কারা প্রবেশ করেছে সেসব তথ্য সংগ্রহের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মামলা নিষ্পতি কম হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তিনি। চিহ্নিত অপরাধী গ্রেফতারে নিয়মিত ব্লকরেইড দেওয়াসহ এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকে নতুন করে ঢাকায় আসছেন আবার অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। পটপরিবর্তনের পর রাজধানীতে কারা কোথায় বসবাস করছেন তাদের বিষয়ে তথ্য নিতে নাগরিক তথ্য হালনাগাদকরণে বা সিআইএমএস (সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) ফরম পূরণের ওপর জোর দিয়েছেন কমিশনার।
মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপির মামলা, গ্রেফতারসহ নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা গেছে, মামলা যে হারে রুজু হচ্ছে সে হারে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এছাড়া ওয়ারেন্ট তামিলের বা গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের হারও কম। যে হারে আদালত থেকে ওয়ারেন্ট তামিল হচ্ছে সে হারে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। পেন্ডিং ওয়ারেন্টের সংখ্যাই বেশি থাকছে। এর ফলে অনেক আসামি সুযোগ নিচ্ছে। এসব বিষয় উলেখ করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সভায়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মারামারি, হানাহানি চলছে। এসব বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। আগের মতো এলাকার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে পুলিশিং করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপির উপকমিশনারদের (ডিসি) বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অফিসাররা যে যে বিষয়ে দক্ষ তাকে সেই বিষয়ে কাজ করাতে হবে। ট্রাফিক বিভাগের পুলিশের উদ্দেশে কমিশনার বলেছেন, আপনারা আরেকটু সচেতন ও সহনশীল হবেন। হুটহাট রিকশা ড্রাইভারকে মারধর করবেন না। তারা অন্যায় করলে প্রসিকিউশন করেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে অবশ্যই মানবিক আচরণ করবেন।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ওসিদের উদ্দেশে বলেছেন, আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় অবশ্যই মামলা নিতে হবে। কোনো ঘটনা আড়াল করা যাবে না। মামলার রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অপরাধ যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক পুলিশি কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, সর্বোচ্চ বিনয়ী থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো অবস্থায়ই দৃষ্টিকটু ও অপেশাদার আচরণ করা যাবে না। ডিএমপির প্রতিটি থানার ওসিকে মামলা তদন্ত করতে হবে। থানা এলাকার প্রতিটি ভবনের সিকিউরিটি গার্ডদের সঙ্গে থানার টহল টিমের সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোনো অপরাধের তথ্য তাদের কাছে থাকলে তারা যেন পুলিশকে সেই তথ্য প্রদান করে সেভাবে কাজ করতে হবে।