ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, ‘৯০ দিনে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি’ করবে। তবে ৯ জুলাই প্রথম সময়সীমা পার হলেও একটি উল্লেখযোগ্য চুক্তিও সম্পন্ন হয়নি, বরং শুল্ক আরোপের সময়সীমা আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

 

ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য ছিল ‘পারস্পরিক শুল্ক’। শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং উৎপাদন খাতকে সুরক্ষা দেওয়া। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতির ৯৫ শতাংশের জন্য দায়ী ১৮টি দেশের সাথে বাণিজ্য বৈষম্য দূর করাই মূল লক্ষ্য।

 

তবে বাস্তবতা হলো, হোয়াইট হাউজের চাপ সত্ত্বেও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপ এবং চীন নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে। জাপানের অর্থমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঋণদাতার ভূমিকা ব্যবহার করে চাপের জবাব দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।বুধবার (৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দেখছে, বাণিজ্য যুদ্ধের হুমকিতে মার্কিন বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং খুচরা বিক্রেতারা শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা জানিয়ে হোয়াইট হাউজকে সতর্ক করছে। অন্যদিকে, শুল্ক আরোপের আগে পণ্য মজুদের কারণে বাণিজ্যে সাময়িক বৃদ্ধি হলেও এখন উল্লেখযোগ্য হারে আমদানি হ্রাস পেয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানি এ বছর প্রায় ৯.৭ শতাংশ কমেছে। তবে চীনের রপ্তানি অন্য দেশে বেড়েছে, যেমন যুক্তরাজ্যে ৭.৪ শতাংশ, আসিয়ান দেশগুলোতে ১২.২ শতাংশ এবং আফ্রিকায় প্রায় ১৯ শতাংশ। এতে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র যখন শুল্কের প্রাচীর তুলছে, বাকি বিশ্ব একে অপরের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণে মনোযোগী হচ্ছে।

 

ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছিল, শুল্ক আরোপে ডলারের মান বৃদ্ধি পাবে এবং মূল্যস্ফীতি রোধ হবে। কিন্তু বাস্তবে ডলারের মান ১০ শতাংশ কমেছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।

 

শুল্ক আরোপ থেকে আয় বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দামের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে প্রায় ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে, যেখানে গত ৪০ বছর ধরে এ হার ২-৪ শতাংশের মধ্যে সীমিত ছিল।

 

 

বাজার আপাতত স্থিতিশীল থাকলেও বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, যদি ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য চুক্তির পরিবর্তে শুল্ক আরোপের উপর নির্ভর করে, তাহলে মার্কিন বাজারে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে এবং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে।

 

বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য যুদ্ধে একতরফা পথে হাঁটার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো কার্যকর কূটনীতি ও বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে স্থিতিশীল সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তা না হলে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে মূল্যস্ফীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলবে।

 

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *