ডায়াল সিলেট ডেকস

চারটি পাকা খুঁটির ওপর দুটি বাঁশ বেঁধে ‘থামুন’ লেখা সাইনবোর্ডসহ ব্যারিকেড দিয়ে উত্তোলনের সরবরাহ পথ বন্ধ করার চেষ্টা উপজেলা প্রশাসনের । সিলেটের জাফলংয়ে পিয়াইন নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন রোধে এমনই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। । তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এই উদ্যোগ  লোক দেখানো । কেউ কেউ প্রশাসনের সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই জাফলং ও গোয়াইনঘাট এলাকায় পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন চলছে। এবং প্রশাসনও অভিযান পরিচালনা করে সিন্ডিকেটের নৌকা, ড্রাম ট্রাক, ড্রেজার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জব্দ করে , মামলা-জরিমানা করে, তারপরও সল্প সময়ের মধ্যে  অপরাধচক্রগুলো  পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে ।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চালানো অভিযানে প্রায় ১০ লাখ ঘনফুট বালু, ২০ হাজার ঘনফুট পাথর, ৫০টি ড্রাম ট্রাক ও ৫০০টির বেশি বারকি নৌকা জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের পর সাময়িক সময়ের জন্য পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন করা হলেও তাতে দীর্ঘমেয়াদি ফল মিলছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের প্রশ্ন-এই অবৈধ উত্তোলনের পেছনে মূল পরিকল্পনাকারীরা কারা? পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথ অভিযানে কিছুটা সাড়া পাওয়া গেলেও রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনের অস্থায়ী তৎপরতার কারণে পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান আসছে না।

জাফলং এলাকাকে ২০১৫ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের গেজেট অনুযায়ী ECA (Environmental Critical Area) বা পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৪.৯৩ বর্গকিলোমিটারের এ এলাকায় যেকোনো খনিজ উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কার্যত উত্তোলন বন্ধ হয়নি, বরং প্রশাসনের অভিযান শেষে পুন পুন জেগে ওঠে সিন্ডিকেটগুলো ।

পরিস্থিতির প্রতিবাদে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ও চা-বাগানের শ্রমিকরা একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের দাবি-শুধু এককালীন অভিযান নয়, বরং স্থায়ী নজরদারি ও সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনাই হতে হবে প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী জানান, `সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে-ইসিএ ও পর্যটন এলাকা থেকে বেআইনিভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। জাফলংয়ে উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে সরবরাহপথে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। প্রশাসন এ এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।‘
তবে স্থানীয়দের মতে, ব্যারিকেড বসিয়ে চক্র নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, প্রয়োজন আইনি কঠোরতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *