ডায়ালসিলেট ডেস্ক:ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজুর ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের এ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

মাদক মামলায় মনজুর পাশাপাশি তার গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেনের ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

শুক্রবার বিকালে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল আসামিদের রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এদিকে কাউন্সিলর মনজুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এসআই হারুন অর রশিদ। ময়নুল হক মনজুর অস্ত্র মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন এবং মাদক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোসহ ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আর তার ড্রাইভারেরও ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

বেলা ৩টা ২৬ মিনিটের দিকে মনজুকে আদালতে তোলা হয়। এর কিছুক্ষণ পর প্রথমে অস্ত্র মামলায় রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, যে কাউন্সিলররা নগরবাসীর সেবা করবেন, আমরা এমন কাউন্সিলর চাই। উনার মতো কাউন্সিলর আমরা চাই না। নির্বাচিত কাউন্সিলররা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, সহযোগী আসামিদের গ্রেফতার, অস্ত্র কোথা থেকে আসে এসব জানার জন্য পুলিশ যে রিমান্ড আবেদন করেছে তা মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দ ওয়াজিউল্লাহসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন তাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু কিছু সুযোগ সন্ধানী এটাকে ব্যবহার করে লোকজনকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। ৩০ অক্টোবর চাঁদাবাজির অভিযোগের একটি মামলায় তাকে আটক করা হয়। এরপর তার অফিসে অভিযান চালানো হয়। তার অফিসটি র‌্যাব-৩-এর পাশেই। এতদিন তাহলে কেন অভিযান চালানো হল না। এজাহারে মামলার ঘটনা ৩টায় আর অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে দুপুর ১টায়। তার মানে ঘোড়ার আগে গাড়ি চলে। তার অফিসে কোনো অস্ত্রই নেই। অস্ত্র থাকলে তিনি লাইসেন্স করিয়ে নিতে পারতেন। র‌্যাব তার অফিসে গিয়েই আগে সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এটা একটা ফেব্রিকেটেড মামলা।

এরপর মাদক মামলায় প্রথমে ময়নুল হক মনজুরকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করা হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলের শুনানি করেন। তারা বলেন, শুধু গাঁজা বাদে তার অফিস থেকে ইয়াবা, বিদেশি মদ, ফেনসিডিলসহ যাবতীয় মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে। আসলে সেখান থেকে কিছুই উদ্ধার হয়নি। যদি উদ্ধার হয়ে যায় তাহলে আবার রিমান্ডের প্রয়োজন কেন। ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ময়নুল হক মনজু আক্রান্ত।

আইনজীবীরা তার রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের রিমান্ডের ওই আদেশ দেন।

কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজু শুনানির সময় আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন। তাকে যেসব মামলা দেয়া হয়েছে, তা মিথ্যা মামলা। তাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

এদিকে এদিন মঞ্জুকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

বৃহস্পতিবার রাতে ময়নুল হক মনজুর বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করেন র‌্যাব-৩-এর ডিএডি ইব্রাহিম।

এদিকে কাউন্সিলর মনজুর বিরুদ্ধে অধিকাংশ অভিযোগই রাজধানী সুপার মার্কেটকেন্দ্রিক। এ মার্কেটের ১ হাজার ৮৮টি দোকান ঘিরেই ছিল তার সবকিছু। এর আগেও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব মহাপরিচালক, র‌্যাব-৩ ও র‌্যাব-১০-এর অধিনায়কের কাছে এ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করার নির্দেশনাও আসে। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের এক সাবেক মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের ছত্রছায়ায় তিনি অবৈধ কাজ করতেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *