ডায়ালসিলেট ডেস্ক;: হঠাৎ বিকট শব্দ। আগুনের কুণ্ডলী এসে গায়ে পড়ে। মুহূর্তেই মনে হলো আগ্নেয়গিরির মধ্যে ডুবে গেছি। প্রবল বেগে রাস্তার ঠিক মাঝখানে পড়ে যাই। এরপর আর কিছু মনে নেই। পরক্ষণে হাসপাতালের বিছানায় যখন হুঁশ ফিরে আসে, বেঁচে আছি-এটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না। মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় বেঁচে ফেরা এস এম কামাল হোসেন তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও।
স্থানীয় একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঝামেলার কারণে পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে টিউশনি শুরু করেন। রাজধানীর শাহজাহানপুরের মেয়ে সানোয়ারা সানুর সঙ্গে সাত বছর আগে বিয়ে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে মগবাজার থেকে চশমা নিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন। আহত কামাল হোসেন বলেন, মগবাজারে অবস্থিত আমেরিকান চক্ষু হাসপাতালে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে একটি চশমার অর্ডার দেই। চশমা আনতে ঘটনার দিন বিকালে মগবাজারের উদ্দেশ্যে শাহজাহানপুর থেকে আয়াত পরিবহনে উঠি।
গাড়ি হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে নামিয়ে দেয়। এ সময় পায়ে হেঁটে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ংয়ের শোরুম লাগোয়া ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। বিস্ফোরণের সময় আমি তখন ওই ভবনের ঠিক সামনে ছিলাম। হঠাৎ দেখি বিকট শব্দে একটি আগুনের কুণ্ডলী আমাকে ঘিরে ফেলেছে। মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে খুব জোরে একটি ধাক্কা দেয়। তখন আগুনের গোলার মধ্যে পড়ে যাই। এরপর কী হয়েছে বলতে পারি না।
তিনি বলেন, কাঁচের টুকরোতে কণ্ঠনালী, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে এবং পুড়ে গেছে। ডান হাতের কবজি ভেঙে গেছে। সঙ্গে নগদ ২০ হাজার টাকা, প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র, দামি মুঠোফোনসহ অনেক কিছু ছিল। যা পরবর্তীতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কামালের স্ত্রী সানোয়ারা সানু বলেন, আমাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো ছেলেমেয়ে নেই। বাবার পক্ষ থেকে আমরা দুটো ফ্ল্যাট পেয়েছি। সন্তানের জন্য অনেকদিন ধরে আমরা বিভিন্ন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছি। রেগুলার চেকআপ এবং ফ্ল্যাটের সংস্কার কাজ করাতে ঢাকায় আসি। গ্রামে নিজেদের মাছের খামার, কৃষিসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। এখন তাকে সুস্থ অবস্থায় বাসায় নিয়ে যেতে পারাটাই বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
এদিকে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অষ্টম তলার ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মী জাফর আহমেদ এবং বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাসের সুপারভাইজার কালু। জাফর আহমেদ বলেন, গলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছি। ভাঙা কাঁচের টুকরায় কণ্ঠনালী কেটে গেছে। দক্ষিণ কমলাপুরের বাসা থেকে সন্ধ্যায় এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আগোরার উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। ভবনের রাস্তার সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, সামনে এগিয়ে যাচ্ছি এ সময় হঠাৎ কান ফাটানো বিকট শব্দ। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যাই। এ সময় চারদিক থেকে ভাঙা কাঁচের টুকরো বৃষ্টির মতো গায়ে পড়ছে। সঙ্গে আগুনের তাপ। চারদিক সব অন্ধকার হয়ে যায়। মনের শক্তিতে ভর করে উঠে দাঁড়ালাম। কিছুদূর গিয়ে আবার মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম।
পরবর্তীতে পথচারীরা উদ্ধার করে স্থানীয় আদ্-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ইসলামিয়া হাসপাতাল পরবর্তীতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে। তিনি বলেন, নিজেও বুঝতে পারছি না কীভাবে বেঁচে আছি। মনে হয় ঘটনাস্থল থেকে দূরে ছিলাম। যে জন্য বেঁচে গেছি।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, ১৭ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের মধ্যে বর্তমানে মোট পাঁচ জন রোগী ভর্তি আছেন। দু’জন আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। তাদের শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে গেছে। একজন এইচডিইউ এবং অপর দু’জন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। আইসিইউ এবং এইচডিইউতে ভর্তি থাকা তিনজনের অবস্থা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, মগবাজারের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে আহত মোট ৪০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে চারজন বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
এম/