ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজনে বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। যতক্ষণ দেহে প্রাণ থাকবে ততক্ষণ মানুষের কল্যাণে কাজ করব।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (ভার্চুয়াল) তিনি এ কথা বলেন।
কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টসহ দেশের কয়েকটি স্পটে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারবাসীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমার এটাই প্রতিজ্ঞা যে আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজনে বাবার মতো আমি জীবন দিয়ে যাবো, রক্ত দিয়ে যাবো। কিন্তু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাবো। যতক্ষণ আমার শ্বাস আছে ততক্ষণ আপনাদের পাশে, আপনাদের উন্নয়নে কাজ করে যাবো। তিনি বলেন, আপনাদের মাঝেই হারানো বাবা, হারানো মা, ভাইয়ের স্নেহ ভালোবাসা ফিরে পেয়েছি। কাজেই আপনাদের জন্য জীবনটা এতটুকু কুণ্ঠিত না। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যত বাধাই আসুক, আমরা করে যাবোই। সবাই সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে। সুন্দর থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন দেশে ফিরে আসি, বাবা-মা ভাই কাউকে পাইনি। কিন্তু পেয়েছিলাম লাখো মানুষ। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা ছুটে গিয়েছিল। কাজেই তারা সেদিন থেকে আমার আপনজন। এ বাংলাদেশের মানুষ তারাই আমার পরিবার, তারাই আমার সব। তাদের জন্যই আমি কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষই আমার সব থেকে আপনজন এবং আমার পরিবার হিসেবে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, যে মানুষগুলোকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) এত গভীর ভাবে ভালোবাসতেন সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করা তো আমার একমাত্র লক্ষ্য। নিজের জীবনে কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু একটা কথাই চিন্তা করি যে দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম। কতটুকু দিতে পারলাম। বাংলাদেশের মানুষ যখন ভালো থাকে। বাংলাদেশের মানুষের মুখে যখন হাঁসি ফুটে এটাই তো জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এর থেকে বড় পাওয়া তো আর কিছু নেই।
সরকার প্রধান বলেন, অনেক বাধা, অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে। বার বার আমার ওপর আগাত এসেছে। আমি কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। আমি চেষ্টা করে গেছি, এদেশের মানুষের জন্য, কিছু করে যেতে, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে।
তিনি বলেন, ‘ঠিক যেভাবে আমার বাবার কাছ থেকে বর্ণনা শুনতাম, যেভাবে তিনি বলতেন যে বাংলাদেশে কিভাবে উন্নতি করবেন ঠিক সেই কাজগুলোই করে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। তারই শুভ ফল আজ দেশবাসী পাচ্ছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে যেন আমরা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারি; যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এই অগ্রযাত্রা যেন আমরা অব্যাহত রাখতে পারি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। সেই প্ল্যানও আমি করে দিয়েছি। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ করে দিয়েছি। এই বদ্বীপটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলে যেতে।
তিনি বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেনো সুন্দর ভাবে জীবন জীবিকা করতে পারে। সেই ব্যবস্থা আমি করে যাচ্ছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। সেই পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। কাজেই বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করেছি, শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। বাংলাদেশের কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি দেশে বিদেশে আজকে সে মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঙালি চলতে পারে। কাজেই এই চলা যেন থেমে না যায়। এইটুকুই শুধু আমার চাওয়া।
তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিবারই আমরা নতুন নতুন থিম নিয়ে এসেছিলাম। আমরা যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেই সেটা ভুলে যাই না। ইশতেহার সামনে রেখেই আমরা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে থাকি। সেই আস্থা-বিশ্বাসটাই হচ্ছে আমাদের বড় শক্তি। মানুষের বিশ্বাস, মানুষের আস্থা এবং মানুষের ভালোবাসাই আমাদের প্রেরণা।
কক্সবাজারকে ঘিরে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ‘কক্সবাজারকে ঘিরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে।’
শুধু বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিশেষ পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। কক্সবাজারের ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই কক্সবাজারটাই হবে এক সময় প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যাওয়ার একটা সেতু বন্ধন রচনা করবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *