ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে দোকান মালিকের প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছেন এক ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ি। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, এসএমপি’র শাহপরাণ (রহ.) থানার শাহজালাল উপশহরের আই ব্লকের স্প্রীং গার্ডেনের বাসিন্দা হাজী হারিছ আলীর ছেলে রফিক আহমদের কাছ থেকে জিন্দাবাজার আল-হামরা শপিং সিটির বিপরীতে টিন শেডের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে, মায়ের জমানো টাকা ও সম্পত্তি বিক্রি করে ‘ওয়ান টু হান্ড্রেড প্লাস’ নামের ব্যবসা শুরু করেন চৌহাট্টা ভূইয়া মেটালের পিছনের বাসার অস্থায়ি বাসিন্দা আব্দুল বারেক মাইশানের ছেলে মিজানুর রহমান মাইশান।
কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা করার পর থেকে কোন ধরণের বৈধ চুক্তি না করে নানা ধরণের প্রতারণা ও দোকানের মালামাল লুট, জোর পূর্বক দোকান তালামারা সহ নানা ধরণের হয়রাণী করে আসছেন দোকান মালিক রফিক। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে অভিযোগ ও সহায়তা চেয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দোকানের ভাড়াটিয়া।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার সদর দক্ষিন উপজেলার সুলতানপুর মইশান বাড়ি। খুব ছোট থেকে এসে বিভিন্ন দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন। একপর্যায়ে রফিক আহমদের দোকানেও ম্যানেজার ছিলেন। তখন ওই দোকানের দুই মালিক ব্যবসা ছেড়ে দিলে, রফিক আহমদ অন্য কাউকে দোকান না দিয়ে তাকেই দোকান ভাড়া দেওয়ার জন্য উপযুক্ত মানুষ হিসাবে বেছে নেন।
কিন্তু দোকান মালিককে বিশ্বাস করাই জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছে তার। দোকান হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। সন্তান হয়ে অসুস্থ মা-বাবার চিকিসৎসার খরচও বহন করতে পারছেন না।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দোকান কোঠা নেয়ার পর থেকে মালিকের কাছে ভাড়ার চুক্তিনামা চাইলে মালিক বলেন, তিনি হাজী মানুষ হ্জ্ব করে এসেছেন। তার ভাইদের সঙ্গে কিছু সমস্যা আছে। আর বিয়ানীবাজার থেকে এসে স্ট্যাম্পে দোকানের চুক্তি করে দিবেন। তার কথায় সরল বিশ্বাসে কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করেননি ভাড়াটিয়া। একপর্যায়ে দোকান মালিক তার নিজ হাতে লেখা সাদাকাগজে একটি চুক্তিনামা দেন। এতে ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। দিন দিন বিক্রি বাড়তে থাকে ওই প্রতিষ্টানে।
বিক্রি দেখে দোকান মালিক ভাড়াটিয়ার কাছে প্রস্তাব দেন দুই শতক জমি তার নামে লিখে দেবেন। যার দাম ধরা হবে ৪০ লাখ টাকা। আর ৪০ লাখ টাকা হওয়ার পর ওই দোকানের দুই শতক ভাড়াটিয়ার নামে বায়না করে দেবেন। ভাড়াটিয়া সরল বিশ্বাসে মালিককে প্রতিমাসে ১ লাখ পনের হাজার টাকা করে দিতে থাকেন।
এভাবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দোকান ভাড়া বিদ্যুৎ বিল এবং দোকানের বায়না বাবদ ১ লাখ পনের হাজার টাকা করে দেয়া হয়। টাকা দেওয়ার পর দোকানের চুক্তিনামার জন্য মালিককে বললে, তিনি কোন চুক্তি দিতে অপারগতা জানান। একপর্যায়ে বিষয়টি সিলেটের একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে অবগত করলে, দোকন মালিক সাদাকাগজে টাইপ করা একটি চুক্তিনামা দেন। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য দোকানটির সামনের অংশ ভাঙ্গা পড়ে। তখন দোকান বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। ওই সময় দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। দোকান মালিকের কাছে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার জন্য চাপ দিলে তাতেই শুরু হয় জটিলতার।
তখনই ফুটে উঠে রফিক আহমদের প্রতারণার কৌশল। সেপ্টেম্বরে ভাড়া নিতে আসেন রফিক। তাকে ভাড়া এবং দোকান কেনার বায়না বাবদ সকল টাকা পরিশোধ করেন মাইশান। আর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে সংযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়। তখন দোকান মালিক উত্তেজিত হয়ে বিল পরিশোধ করবেন না বলে শাশিয়ে যান। এরপর কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই ২৮ সেপ্টেম্বর রফিকের ছেলে জনিসহ বেশ কয়েকজন যুবক দোকানে ঢুকে জোরপূর্বক ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার চারটি চেক সই করে নিয়ে যান। আর দোকানের ভেতরে ভাড়াটিয়াকে মানসিক এবং শারিরীকভাবে নির্যাতন করেন।
এরপর দোকানে তালা লাগিয়ে দেন রফিক আহমদ। পরবর্তীতে অন্যান্য দোকান মালিকদের পরামর্শে থানায় সাধারন ডায়রি-নং ৯৮৯, তারিখ-১৩-১০-২০১৯ দাখিল করেন ভাড়াটিয়া। জিডি পর পুলিশ গিয়ে দোকানটি যেভাবে অছে সেভাবে রাখার নির্দেশ দেন। আর উভয় পক্ষ কাগজপত্র নিয়ে থানার হাজির হওয়ার পরামর্শ দেন এসআই ঝন্টু। কিন্তু জিডি করার পর উল্টো হুমকি দেন রফিক আহমদ। আর আবাদী বলে গালি দেন এবং থানায় মামলা করে কিছু করতে পারবে না বলেও হুমকি দেন। পরে ভাড়াটিয়া আদালতের শরনাপন্ন হয়ে ৩ নভেম্বর মামলা নং ১৮৪০/২০১৯ ইং দাখিল করেন। আদালত দরখাস্তটি মামলা হিসাবে রেকর্ড করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন পুলিশকে।
৫ জানুয়ারি ভাড়াটিয়ার নানার মৃত্যু সংবাদ শুনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কুমিল্লা চলে যান। সেখানে থাকাবস্তায় দোকান মালিক দোকানের মালামাল নিয়ে যান। ওই সংবাদ শুনে তাড়াহুড়ো করে ভাড়াটিয়া ও তার ভাই সিলেট চলে আসেন। সিলেট এসে দেখতে পান আদালত ও থানার নির্দেশ উপেক্ষা করে রফিক আহমদ ও তার ছেলে জনি ও তার সহযোগীরা মিলে দোকানের ভেতরে থাকা মালমাল নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ১২ লাখ টাকা মূল্যের ডেকোরেশন ভেঙ্গে নিয়েও যান তারা।
বিষয়টি পুলিশের কাছে জানানো হলে, তখন পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, এতে উপর মহলের হাত রয়েছে। তাদের হাত-পা বাঁধা। তাই কিছু করা সম্ভব নয়। থানা পুলিশের কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা নং ০১/২০২০ ইং দাখিল করেন ভাড়াটিয়া। ওই মামলায় আদালত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এবাদ উব্লাহ কোন প্রকার যোগাযোগ না করেই পক্ষালম্বন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনের উপর আদালতে নারাজি দেন ভাড়াটিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো উল্লেখ করেন,একদিকে দোকান মালিক জোর করে দোকানে থাকা ৫৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যান। অন্যদিকে তার কাছে থাকা জামানতের ২ লাখ টাকাও দেননি। দোকানে ব্যবসা করা অবস্থায় প্রতিমাসে দোকানের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেও আজ তিনি বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার কারনে মামলার আসামী। অথচ ওই বিদ্যুতের মিটার দোকান মালিকের নামে রয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, তাকে দোকান থেকে বিতাড়িত করে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করেই নতুন একটি মিটার দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করার চার মাস পর দোকানে আবারো বিদ্যুতের সংযোগ দেখে বিদ্যুত বিভাগের লোকজন দোকানের ভেতর ঢুকেন।
সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান পুরনো মিটারের বিল পরিশোধ না করেই নতুন মিটারে দোকানে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা দেখতে পান বর্তমানে যে মিটার সেটি অবৈধ। তখন অবৈধভাবে মিটার লাগানো এবং বিল না দিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে রফিক আহমদকে আসামী করে একটি মামলা করেন। বর্তমানে ওই মামলাটি চলমান রয়েছে। এমনকি রফিক আহমদের নামে মিটার থাকার পরও আমার নামে দেওয়া মামলা সেটিও চলমান আছে। তাই ওই ভাড়াটিয়া দোকানের সকল ক্ষতিপূরণ ও তার নামে বিদ্যুৎ বিলের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।