মনজু চৌধুরী: ভয়াবহ বন্যায় সিলেট জুড়ে এখন শুধু চোখে পড়ে ধ্বংসযজ্ঞ। বন্যার আঘাতে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট, সেতু কালভার্ট, ফসলের মাঠ, মাছের খামার, দোকান পাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খাদ্যশস্য, গবাদিপশুসহ জীবন যাপনের নানা উপকরণ। রেকর্ড ভঙ্গারী দফায় দফায় বন্যায় সিলেট মহানগরীসহ গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মানুষজন যেন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে কোন রকমে বেঁচে আছেন।প্রলয়ংকারী ঝড় বৃষ্টি বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েন এতদঞ্চলের মানুষজন। চারিদিকে শুধু শোনা গেছে শিশু নারী পুরুষের কান্না আর বুক ফাটা আর্তনাদ। বানের পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে বসতবাড়ী, চালচুলো, গাছপালা, মাঠের ফসল, গৃহপালিত পশু ও খামারের মাছ। অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন নিষ্ঠুর বন্যার করালগ্রাসে।
বন্যা কবলিত অবস্থা আর বন্যা পরবর্তী সময়ে মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য এই মন্ত্রকে ধারণ করে অসহায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল।। বন্যা দুর্গতদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধার তৎপরতাসহ তাদের নানা উপকরণ প্রদান করে তাদের মনে সাহস শক্তি যুগিয়েছেন তারা।এমনি একজন মানুষ যিনি গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল।
তিনি জীবনকে তুচ্ছ করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বানভাসী মানুষদের জন্য বাড়িয়ে দেন দরদী হাত। তার অধীনস্থ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন মানুষের জীবন রক্ষার কাজে। বন্যার ভয়াবহতা আর প্রকৃতির বিরূপ আচরণকে উপেক্ষা করে সকাল দুপুর রাত অবধি তিনি ছিলেন বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে। তাদের সাহস যোগাতে প্রাণে বাঁচাতে সবসময়ই সুদৃষ্টি ও দিক নির্দেশনা প্রদান করে গেছেন।পুলিশের আন্তরিকতায় বানভাসী মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়। তারা বিপদে বন্ধুর মতো পুলিশ সদস্যদের কাছে পেয়ে বিমুগ্ধ হন।
গোয়াইনঘাটে ৪র্থ দফা বন্যা শুরু হয় ১৬ জুন। পুরো দিন ছাপিয়ে ১৭ জুন সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় প্রলয়ংকারী বন্যার ভয়াবহতা।নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন,থানাসহ সর্বত্রই পানিতে তলিয়ে যায়।মুহুর্তেই বেড়ে যায় চলে পানি। অথৈ জলে একাকার হতে থাকে চারদিক। বাড়ীঘর ফসলের মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মসজিদ, মন্দির, সবখানে হাহাকার শুরু হয়।বেঁচে থাকার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু হয় দিশেহারা বানভাসী মানুষের।
গোয়াইনঘাটের ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র ৬নং ফতেপুর ইউনিয়নটি ছাড়া সবকটি ইউনিয়ন সর্বনাশা বানের জলে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। থানা পুলিশ সহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুরুতেই ২০টি রেসকিউ টিম গঠন করে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান। প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, স্কাউটসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও একসাথে নামেন উদ্ধার তৎপরতায়।
১৭ জুন সারা দিন ও শনিবারেও চলে বানভাসী মানুষজনকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা। গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক না থাকলেও পুলিশ নিজেদের রেডিও বার্তায় প্রতিটি ইউনিয়নে নিয়োজিত বিট অফিসারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চালিয়ে যান উদ্ধার তৎপরতা।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা সদর থেকে শুরু করে সুদূর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের উদ্ধার অভিযান। পাহাড়ী ঢল সৃষ্ট ভয়াবহ এই বন্যায় বানবাসী মানুজনকে প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।পরবর্তীতে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় শুরু করেন শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি, মোমবাতি, পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট,খাওয়ার স্যালাইনসহ দূর্যোগ কালীন ঔষধপত্র বিতরণ।বিকল্প অপারেটর ব্যবহার করে আসেন ফেসবুক লাইভে। মুহুর্তে গোয়াইনঘাটের বন্যার ভয়াবহতার খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে।সবখান থেকেই তার নেতৃত্বাধীন পুলিশের উদ্ধার তৎপরতা এবং বানভাসী মানুষের পাশে থাকার সচিত্র অবস্থানটি মানুষের বাহবা কুড়ায়।
মানবিক এবং মানবিকতার উজ্জল নির্দশন হয়ে গোয়াইনঘাটের বিপদগ্রস্থ বানভাসীসহ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন ওসি কে.এম.নজরুল। সেই থেকে শুরু হয় দূর্গত এলাকার মানুষের খুব কাছাকাছি থেকে সেবা দেওয়ার। প্রতিদিন সন্ধা রাতে শুরু হয়ে ভোর রাতে শেষ হয় হোটেল এবং থানার মেসে রান্না করা খাবারের আয়োজন।সেগুলো প্যাকেটজাত করে তা বিপদগ্রস্থ মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হয় প্রতিদিন।এ সময় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে পাশে ছিলেন সিলেটের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম।