ডায়ালসিলেট ডেস্ক:: দেশে উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই দেশজুড়ে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শুরু থেকেই করোনা প্রতিরোধে মাঠের সম্মুখ যোদ্ধা বাংলাদেশ পুলিশেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
দেশজুড়ে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ৬৭৭ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংকটের প্রথম থেকেই বিদেশফেরতদের অবস্থান শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত, আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে পাঠানো, লকডাউন নিশ্চিত করা, ত্রাণ বিতরণ, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত থেকে শুরু করে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নানা কার্যক্রমের জন্য পুলিশ সদস্যদের সরাসরি জনসাধারণ এবং আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ফলে নিজেদের মধ্যেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের ৬৭৭ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৮ জন সদস্য। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৬৮ জন সদস্যের করোনা টেস্টে ফলাফল পজিটিভ এসেছে।
এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন পুলিশের ৫৫ জন সদস্য। এছাড়া, বর্তমানে ১৭৪ জন সদস্য আইসোলেশনে রয়েছেন এবং কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১ হাজার ২২৫ জন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত চার পুলিশ সদস্য হলেন- ডিএমপির কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৪০), এএসআই মো. আব্দুল খালেক (৩৬), ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মো. আশেক মাহমুদ (৪৩) এবং পুলিশের বিশেষ শাখার এসআই নাজির উদ্দীন (৫৫)। এদের মধ্যে সর্বশেষ শুক্রবার (০১ মে) সকালে এসআই নাজির উদ্দীন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
করোনায় পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো করছেন কনস্টেবলরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের সৎকার কিংবা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার কাজে সরাসরি কনস্টেবলরাই যুক্ত হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কারণে তাদের নিজেদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কনস্টেবলদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দরকার।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে পুলিশ যে দায়িত্ব পালন করে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জানার পরও সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, দেশ ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্টের জায়গা থেকে পুলিশ সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। ইতোমধ্যে আমাদের বেশ কয়েকশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং চারজন গর্বিত সদস্য দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। আমরা তাদের জন্য গর্বিত। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যগণ তাদের এই ত্যাগকে, এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন এবং মনোবলের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষা সামগ্রী তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।