ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বাগান থেকে আম সংগ্রহের পর তা মানসম্মতভাবে পরিবহনের জন্য প্লাস্টিকের তৈরি ক্যারেটের প্রয়োজন হয়। এই প্লাস্টিকের তৈরি ক্যারেটের বিশাল বাজার রয়েছে। মানভেদে প্রতিটি ২০ কেজি ধারণক্ষমতার প্লাস্টিকের ক্যারেট বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৮০ টাকায়।

 

ব্যবসায়ীরা জানান, আম পরিবহনের জন্য বাজারে সাধারণত চার ধরনের মানের ক্যারেট পাওয়া যায়। তবে বাজারে সাধারণত ২০ কেজি ওজনের ক্যারেট বেশি পাওয়া যায়।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় ৯২,৯১৩ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫০৬ মেট্রিক টন।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উৎপাদনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আম এই চারটি জেলায় খাওয়া হয়। বাকি আম দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে রপ্তানি হয়।

 

সেই হিসাবে ৯ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন আম দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। এসব আম পরিবহনের জন্য ক্যারেটের প্রয়োজন হয়। ১ মেট্রিক টন বা এক হাজার কেজি আম পরিবহনের জন্য ক্যারেটের প্রয়োজন পড়ে ৫০টি। অর্থাৎ প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন আম পরিবহনের জন্য ক্যারেটের প্রয়োজন পড়ে ৪ কোটি ৬১ লাখ পিস। অর্থাৎ গড়ে ২০০ টাকা হিসেবে যার বাজারমূল্য ৯২২ কোটি টাকা।

 

মজার ব্যাপার হলো, আম পরিবহনের জন্য এত বিশাল টাকার ক্যারেটের মার্কেট হলেও এসব ক্যারেট কোনোটাই দেশে তৈরি হয় না। সুনির্দিষ্টভাবে আম পরিবহনের জন্যও এসব ক্যারেট বাজারে আসে না। বছরজুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আপেল, কমলালেবু, আঙুর, বেদনা, নাশপাতি, খেজুরসহ বিভিন্ন যে ফল প্যাকেটজাত হয়ে ক্যারেটের মাধ্যমে আসে সেইসব ক্যারেটই বছরজুড়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। আর আমের মৌসুম এলে তা আমের বাগানি, ব্যবসায়ীদের কাছে খুচরা বিক্রি করেন। তারা আবার আম পরিবহনের জন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। অর্থাৎ শেষমেশ যিনি ভোক্তা, তাকেই ক্যারেটের মূল্য পরিশোধ করতে হয়।

 

রাজশাহীর বাঘাতে আম পরিবহনের জন্য ক্যারেটের ব্যবসা করেন বাদল আলী। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা এসব ক্যারেট সারাবছর ক্রয় করি। আর আমের মৌসুমের দেড় মাস এসব ক্যারেট বিক্রি করি। আমের এক মৌসুমে আমার গড়ে ৭০ হাজার পিস ক্যারেট বিক্রি হয়। রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পঞ্চগড় ও সাতক্ষীরা এলাকায় তিনি ক্যারেট বিক্রি করেন বলে জানান। বর্তমানে ক্যারেটের দাম ১৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত। নীল রঙের ক্যারেট ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তিনি ছাড়াও বাঘায় আরও ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যবসায়ী ক্যারেটের ব্যবসা করেন বলে জানান তিনি।

 

রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে ধ্রুবজিৎ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী বিশ্বজিত সরকার বলেন, দেশে এসব ক্যারেট তৈরি হয় না। বছর জুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যে ফল আসে সেসব ক্যারেটই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রয় করা হয়।

 

তিনি বলেন, দেশের একটি বড় কোম্পানি কালো রঙের প্লাস্টিকের ক্যারেট তৈরির চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সেগুলো খুবই দুর্বল। ক্যারেটে আম প্যাকেটজাতের পর ভেঙে যায়। তাই সেসব আর ব্যবহার করা হয় না। তিনি প্রতিদিন গড়ে ১৫০০ পিস ক্যারেট বিক্রি করেন।

 

তিনি বলেন, আগে বাঁশের তৈরি ঝুড়ির খাঁচিতে করে আম পরিবহন করা হতো। এছাড়া কাগজের তৈরি কার্টনেও আম পরিবহন করা হতো। তাতে পরিবহনের সময় আম নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আম নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু প্লাস্টিকের ক্যারেট মজবুত হওয়ায় বাইরের আঘাত পায় না। আম ভালো থাকে।

 

বাঘার আমচাষী শফিকুর রহমান ছানার ২০০ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে। তিনি প্রতিদিন তার বাগান থেকে প্রায় দুইশ মণ আম প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠান। আম পরিবহনের জন্য তার প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫০ থেকে ৪০০ পিস ক্যারেটের প্রয়োজন হয়। এসব ক্যারেট তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই ক্রয় করেন।

 

তিনি বলেন, বাঁশের তৈরি ঝুড়ি কিংবা কাগজের তৈরি কার্টনের তুলনায় প্লাস্টিকের ক্যারেট আম পরিবহনের জন্য সবচেয়ে ভালো। এতে আম ভালো থাকে। ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও একদম টাটকা আম পাওয়া যায়। এজন্য ক্রেতাদের ২০ কেজি আম পরিবহনের জন্য আমের দাম ছাড়াও ক্যারেটের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা খরচ করতে হয়। এছাড়া এলাকার দূরবর্তী হিসেবে কুরিয়ার সার্ভিসের জন্যও অতিরিক্ত কেজিপ্রতি ১৩ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া আম প্যাকেটজাত করার জন্য প্লাস্টিকের বস্তা ও দড়ি লাগে। আম প্যাকেটজাত ও কুরিয়ার কাজের জন্য তার অধীনে এখন ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

 

তিনি বলেন, রাজশাহীর বাজারে প্রতি কেজি আমের দাম ৬০ টাকা হলেও ক্যারেটের মূল্য, কুরিয়ার খরচ ও শ্রমিকের দাম দিয়ে সেই আম ঢাকার ক্রেতাদের খেতে হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, এই বছর চার জেলায় ব্যাপক আম উৎপাদন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এবার কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছেন। যেহেতু উৎপাদনের বেশিরভাগ আমই দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয় তাই দেশের বাইরে আমের বড় বাজার তৈরি করা প্রয়োজন। এসব নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করছে যাতে কৃষকরা বিদেশে আম রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করতে পারেন।

 

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *