ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: মৌলভীবাজারে জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। কমিটি ঘোষণা বিলম্বিত হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছেন বলে জানান যুবলীগের অনেক নেতা। তারা মনে করেন, এতে জেলায় যুবলীগের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা চলছে। নেতৃত্বহীন থাকায় অনেকটাই নিষ্ক্রিয় সাংগঠনিক কার্যক্রম। জাতীয় নির্বাচনে আগে দলীয় নেতাকর্মীকে সক্রিয় রাখা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগ বলেছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে কমিটি ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।

জানা গেছে, কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীরা সম্মেলন পরবর্তীতে ঢাকায় লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নিজস্ব জরিপ ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। যেখানে ক্লিন ইমেজ, বয়স, বিগত দিনে ছাত্র ও যুব রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণে থাকা প্রার্থীরা নতুন নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বিগত দিনের মতো যুবলীগের একক ব্যানারে এখন কোনো কর্মসূচি পালন হচ্ছে না। পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে দিবসভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছেন। এছাড়াও কয়েকজন পদ পাওয়ার আশায় অভিভাবক সংগঠনের সঙ্গে নিজেদের সমর্থকসহ মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিলেও নেই সেই প্রাণচাঞ্চল্যতা। সম্মেলনের পূর্বে ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলাসহ প্রতিটি ইউনিটে সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল ছিল, কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে জেলা কমিটি না থাকায় এর প্রভাব পড়েছে প্রতিটি ইউনিটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কয়েকজন কর্মী জানান, প্রায় স্থবির হয়ে পড়া সংগঠনটির কার্যক্রম নতুন করে ফেরার তাগিদে কমিটি গঠনে জোর দিচ্ছেন তারা। তাছাড়া আসছে জাতীয় নির্বাচনে সংগঠনটির নতুন কমিটি না হলে তার মূখ্য ভূমিকা হারিয়ে ফেলবে বলেও আভাস দেন তারা।

এদিকে কমিটি না থাকায় বর্তমানে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ড নেই। তদারকি না থাকায় জেলার নিয়ন্ত্রণাধীন উপজেলা ও পৌরসভার ইউনিটগুলোর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলার জন্য জেলা যুবলীগের শক্তিশালী অবস্থান জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় নেতারা।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, জেলা যুবলীগের গত বছরের ১০ অক্টোবরের সম্মেলনে সভাপতি ও সম্পাদক পদ নিয়ে সংগঠনে দ্বিধা বিভক্তি দেখা দেয়। এসময় স্থানীয়ভাবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক দুই সভাপতি মেয়র ফজলুর রহমান ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল হোসেন এবং বিলুপ্ত জেলা যুবলীগের সভাপতি নাহিদ আহমদের সমর্থকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বেশি হওয়ায় যাচাই বাছাইয়ের জন্য জেলা যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব কেন্দ্র থেকে পরে জানানো হবে, সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে এমন ঘোষণা দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

আরও জানা যায়, ২০২২ সালের ১৮ ও ১৯ মে যুবলীগ জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে ইচ্ছুকদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে কেন্দ্র। ওই সময় জেলা যুবলীগের ২১ জন নেতা তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। সভাপতি পদে ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১২ জন।

নেতাকর্মীদের দেয়া তথ্যমতে, সভাপতি পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন, সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান মুজিব, সহ-সভাপতি মহি উদ্দিন চৌধুরী ফাহিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সেলিম হক, পান্না দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রুমেল, সহ-সম্পাদক সিতার আহমদ, সদস্য মবশ্বির আহমেদ ও মতিউর রহমান মতিন। সাধারণ সম্পাদক পদে বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুমেশ দাশ যীশু, গৌছ উদ্দিন নিক্সন, হোসেন মো. ওয়াহীদ সৈকত, প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান রাজিব, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সৈয়দ নাজমুল, অর্থ সম্পাদক সন্দ্বীপ দাস, উপ-দপ্তর সম্পাদক তুষার আহমদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আজিজ, সহ-সম্পাদক সাদমান সাকিব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান রনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনি, সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুজ্জামান সুমন।

পরবর্তীতে ওই বছরের ২৪ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর সভাপতি ও সম্পাদক পদ ব্যাতীত অন্যান্য পদে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর শাখায় জীবন বৃত্তান্ত গ্রহন করলে প্রায় তিন শতাধিক পদপ্রত্যাশীরা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সম্মেলন হওয়ায় পদপ্রত্যাশীদের তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে বলে জানা গেছে।

সাবেক ছাত্র নেতা সুমেল আহমদ বলেন, এত দীর্ঘ সময় কমিটি বিহীন যুবলীগ কখনও ছিল না। এতে সংগঠনে স্থবিরতা নেমে আসবে এটিই স্বাভাবিক। সামনে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। শক্তিশালী যুবলীগ ছাড়া এগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

জেলা যুবলীগের বিলুপ্ত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, ১০ মাসে বেশি সময় ধরে সংগঠনের কার্যক্রম নেই। আওয়ামী লীগের পরেই যুবলীগের স্থান। এমন একটি সংগঠনের কার্যক্রম নেই। যত দ্রুত সম্ভব যোগ্য নেতৃত্বের একটি কমিটি দেওয়া করা দরকার।

সংগঠনের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি খুব শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।

এবিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বে) প্রফেসর ড. রেজাউল কবির মুঠোফোনে  বলেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজার যুবলীগেও নতুন নেতৃত্ব আসবে। সেপ্টেম্বর মাসে কমিটি ঘোষণা করা সম্ভাবনা রয়েছে, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। যাদের নেতৃত্বে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।

২০১৭ সালের ৪ মে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় নাহিদ আহমদকে সভাপতি এবং সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *