কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় আদালতে মামলা করেছে নিহত রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়া।
পরে আদালত মামলাটি র‌্যাবের কাছে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন।

বুধবার দুপুরে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করা হয়। অ্যাডভোকেট মো. মোস্তফার নেতৃত্বে এ মামলা দায়ের করা হয়। এতে টেকনাফের আলোচিত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ মোট নয়জনকে মামলায় আসামি করা হয়।

জানা গেছে, বুধবার সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে মামলা করতে পৌঁছান নিহত রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়াসহ পরিবারের সদস্যরা । প্রথমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে যান। সেখান থেকে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মোস্তফার চেম্বারে যান এবং সেখান থেকে কাগজপত্র প্রস্তুত করার পর দুপুরে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে মামলা করেন।

শারমিন শাহরিয়া মামলায় বাদী হয়ে মোট ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে । এতে প্রধান আসামি টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। ২য় আসামি হলেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

জানা গেছে, সিনহার বাড়ি যশোরের বীর হেমায়েত সড়কে। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ খান অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন। ৫১ বিএমএ লং কোর্সের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেছিলেন সিনহা।

২০১৮ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেও (এসএসএফ) তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কেই ঈদের আগের রাতে (শুক্রবার) হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়া মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। পুলিশের দাবি, আত্মরক্ষার্থেই তাদের গুলি ছুড়তে হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, তল্লাশিচৌকিতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান রাশেদ খান। একপর্যায়ে তিনি পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হলে আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতেই তিনি নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ভ্রাম্যমাণ এক ব্যবসায়ী জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে একটি প্রাইভেটকার পৌঁছলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ব্যারিকেড দেন।

এ সময় হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নেমে আসেন একজন (সিফাত)। এর পর নিজের পরিচয় দিয়ে হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামেন মেজর (অব.) সিনহা মো, রাশেদ। তিনি নামার সঙ্গে সঙ্গে কোনো জিজ্ঞাসা না করেই গুলি ছোড়েন লিয়াকত আলী। মুহূর্তেই সিনহা মাটিতে ঢলে পড়েন।

একপর্যায়ে ১০-১২ মিনিট পর সাদা নোয়াহ (মাইক্রোবাস) যোগে ঘটনাস্থলে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ উপস্থিত হন। কয়েক মিনিট পর একটি মিনি ট্রাকে (পিকআপ) সিনহা মো. রাশেদকে তুলে কক্সবাজারের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন ওসি।

ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হামিদ আরও বলেন, ‘আমার চোখের সামনে ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা কখনও ভোলার নয়।’

তবে রাশেদ খানের পরিবার বলছে, স্পষ্টতই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের তদন্তের মাধ্যমে আসামীদের বিরোদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। রাশেদ খানের সাবেক সহকর্মীরাও এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া না দেখাতে নিজেদের সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *