ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্য নিরসনে লাগাতার আন্দোলন ও ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এবার সরকারি চাকরির সব গ্রেডে সব মিলিয়ে ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবি জানিয়ে ১০ জুলাই সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ এ অবরোধ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ২০২৪ সালের ৯ জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এদিকে কোটা পুনর্বহাল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।

 

আবেদনটি ১০ জুলাই আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এ আদেশ দেন। কোটা নিয়ে বিচারাধীন মামলায় শিক্ষার্থীদের পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদনকে ‘ইতিবাচক’ বর্ণনা করে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মনে করেন তারা সঠিক পথে হাঁটছেন। সচিবালয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য আপিল বিভাগে দরখাস্ত করেছেন। এটাকে সাধুবাদ জানাই। এখন তারা তাদের বক্তব্য আদালতে দেবেন। আশা করব, যেহেতু তারা আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন। তবে আন্দোলনকারীরা বলেন, যে দুজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে আপিল করেছেন, তারা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এদিনও কোটা বাতিলের দাবিতে বরিশাল, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

 

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড (অবরোধ) কর্মসূচি পালিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ এর আওতাভুক্ত থাকবে। দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের কাছের সড়ক অবরোধের আহ্বান জানান তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, এ আন্দোলন শিক্ষার্থীরা তৈরি করেনি। হাইকোর্টের রায় ও সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকার প্রেক্ষাপটে এ আন্দোলন। আমাদের আন্দোলনের ফলে জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে, এর দায় সরকারকে নিতে হবে। কারণ, আমরা এতদিন ধরে আন্দোলন করছি- কিন্তু এখনো সরকার বা নির্বাহী বিভাগ থেকে কোনো আলোচনার ডাক বা আশ্বাস পাইনি। আমরা এমন একটা চূড়ান্ত সমাধান চাচ্ছি যাতে ভবিষ্যতে কোটা নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হয়। সেজন্য আমরা অনগ্রসর জাতির কথা বিবেচনায় রেখে সংসদে আইন পাশ করার মাধ্যমে কোটার যৌক্তিক সংস্কার দাবি করছি।

 

সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, এটা কোটা বাতিলের নয়, বরং বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় করে যৌক্তিক সংস্কার। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাদের দাবিকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের রিওয়ার্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতি, পোষ্য কোটার বিরোধিতা করছি। আমাদের আন্দোলন গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা সবাই এতে সমর্থন জানিয়েছেন। আমরা নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, গণমাধ্যম- সবার সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, দুজন শিক্ষার্থী হাইকোর্টে আপিল করেছেন। যারা আপিল করেছেন, তারা আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আমাদের মূল দাবিটা মূলত নির্বাহী বিভাগের কাছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সমন্বয় করেছি। আমাদের মাঠপর্যায়ে জরিপ ও সর্বসম্মতিক্রমে শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী- এ তিনটি শ্রেণি কোটার আওতাভুক্ত হবে।

 

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *